শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন চর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ-সবল, দক্ষ যোগ্য, মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর আইডিইবি ভবনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোস্ট-কোভিড টোটাল ফিটনেস চালুকরণ শীর্ষক প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর ধ্যান চর্চায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাজের সব স্তরে সৎ, সাহসী, আশাবাদী, সহমর্মী ও ইতিবাচক মানুষ হয়ে ওঠার চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য যে সোনার মানুষের কথা বলেছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা বাস্তবায়নে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি এ ধ্যান চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চা করে আলোকিত মানুষ হোক। ধর্মচর্চা ও আত্মিক উন্নয়নে, শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য, সব হতাশা-নেতিবাচকতা দূর করার জন্য, সব আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার জন্য তারা ধ্যান চর্চা করুক। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে, লক্ষ্য স্থির করে জীবনকে এগিয়ে নিতে, শুদ্ধাচার চর্চার জন্য তারা এটা করুক। যা কিছু আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে দেবে, জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে এবং একটা উন্নত, সুখী সমৃদ্ধ জীবন দিতে পারবে- তার সব কিছু অর্জনের পথে ধ্যান একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ’
দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা বিজ্ঞান মনস্ক, প্রযুক্তিবান্ধব, প্রযুক্তি ব্যবহারে ও উদ্ভাবনে দক্ষ, মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের এ প্রয়াসের সাফল্যে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে ধ্যান। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টোটাল ফিটনেস কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমি আশা করবো সবার মধ্যে ধ্যানের চর্চাটা ছড়িয়ে দিতে। কোয়ন্টাম দীর্ঘদিন ধরে এ কাজটি করছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যারা ধ্যানের চর্চা করে। কোয়ন্টাম ব্যাপকভাবে করছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার সুযোগ হয়েছে কোয়ান্টামে কোর্স করার। আমি নিজে তার উপকারভোগী। আমি মনে করি, সব মানুষের মধ্যে ধ্যান চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার রয়েছে। সমাজে যে অসততা, অস্থিরতা, নেতিবাচকতা রয়েছে তা দূর করতে ধ্যান চর্চা দরকার। ’
মনোচিকিৎসক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর ফারুক।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘দেশে মেধা ও মননের আকাল পড়েছে। যেন অনাবৃষ্টিতে আমরা খরায় ভুগছি। ধ্যান চর্চার মাধ্যমে বৃষ্টি হবে এবং বৃষ্টি থেকে সৃষ্টি হবে। ’
অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জীবনে সাফল্য লাভের চাবিকাঠ হিসেবে স্বপ্ন দেখা ও তা বাস্তবায়নে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে ধ্যানের অবদান তুলে ধরেন। ড. ওমর ফারুক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এবং মহামতি বুদ্ধসহ অন্যান্য মহামানবদের জীবনে ধ্যানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ডা. আনোয়ার সৈয়দ হক বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হতাশা, অস্থিরতা, মাদকাসক্তি, ডিজিটাল আসক্তি, অসহিষ্ণুতা এমনকি আত্মহননের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে তা নিরসনে শিক্ষামন্ত্রীর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টোটাল ফিটনেস প্রোগ্রামের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এর সাফল্য কামনা করেন।